প্রতিটি বাবা মায়ের যাত্রাই অনন্য, এতে আনন্দ, উদ্বেগ এবং আশঙ্কা সবই উপস্থিত থাকে। সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য সবাই কামনা করেন। গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। যদিও আমরা অনেকেই শিশুর লিঙ্গ জানতে সর্বদা আগ্রহী, আমরা প্রায়শই ডাক্তারের সঙ্গে গর্ভজাত বাচ্চার ওজন এবং উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করতে মিস করি । শিশুর ওজন সাধারণত পেটের আকারের মাধ্যমে অনুমান করা হয়।
অনলাইনে গর্ভাবস্থার জন্য কিছু ক্যালকুলেটর পাওয়া যায় যেখানে বাচ্চার বৃদ্ধির সম্পর্কিত নানা তথ্য পাওয়া যায়, তবে এই ব্যাপারে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো। প্রেগন্যান্সির ৩২ তম সপ্তাহে একটি স্ক্যান করা হয় । এই স্ক্যানে জরায়ুর স্বাস্থ্য কিরকম আছে ও বাচ্চার ওজনের সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন ডাক্তার । যদি দেখেন গর্ভস্থ শিশুর ওজন যত হওয়া উচিত সেইমতো বৃদ্ধি হয়নি, তবে সেক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
শিশুর আকার ছোট হওয়ার কিছু কারণ নিচে আলোচনা করা হল।
১. প্রি-ম্যাচিওর বেবি
গর্ভাবস্থার যদি ৩৭ সপ্তাহে যদি বাচ্চার ডেলিভারি হয়, তাহলে শিশুর ওজন কম হতে পারে। ডেলিভারি আগে হওয়ার কোনো স্পষ্ট কারণ নেই, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে যেগুলো পরে তা হল, হবু মা কোনো ধরনের সংক্রমণের (মূত্রাশয় সংক্রমণ, রুবেলা, সিফিলিস, এইচআইভি ইত্যাদি), জরায়ুর বা কিডনির রোগ সমস্যায় ভুগছেন ।
২. ম্যালনিউট্রেশন
গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টিকর অভ্যাসগুলি সন্তানের জন্মের ওজনের ওপর প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের ওজন ভারসাম্যপূর্ণ না থাকে ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য না খেয়ে থাকে তবে শিশুর সঠিকভাবে বিকাশ হওয়ার সম্ভাবনা কম ।
৩. জেনেটিক সমস্যা
যদি জন্মগ্রহণকারী সন্তানের বাবা-মা বা উভয়ই ছোটখাটো মানুষ হন, তবে বাচ্চা আকারে ছোট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লম্বা বাবা মায়ের ক্ষেত্রে উলটোটি হতে পারে। এটি একটি বায়োলজিকাল ব্যাপার । তবে বাচ্চা আকারে ছোট হলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন যে ভবিষ্যতে এর কোনো প্রভাব পর্বে কিনা।
৪. ব্লাড প্রেসার ও হার্টের অবস্থা
আপনার যদি হার্ট সাথে সম্পর্কিত সমস্যা বা রক্তচাপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে তবে গর্ভস্থ বাচ্চার কম পুষ্টি পাওয়ার এবং অক্সিজেনের কম সরবরাহের সম্ভাবনা থাকে। এমনকি এটির জন্য প্রি-এক্লাম্পসিয়া (pre-eclampsia) অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, যেখানে প্লাসেন্টার কার্যকলাপ ক্ষতিগ্রস্থ হয় । এর ফলে বাচ্চা আকারে ছোট হয়ে জন্মাতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ,এই শিশুরা বয়সকালে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় পড়তে পারেন (1) ।
৫. একের অধিক বাচ্চা হলে
জরায়ুতে যদি একাধিক বাচ্চা থাকে তবে তাদের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সীমিত জায়গা থাকে । যে কারণে প্রায়শই তারা কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাচ্চাদের যদি কোনও স্বাস্থ্যগত জটিলতা না থাকে তবে তারা বড় হতে পারে সাধারণ শিশু হিসাবে।
উপরে উল্লেখিত কারণগুলির জন্য আপনার বাচ্চা আকারে ছোটো হয়ে জন্মাতে পারে। যদি তার কোনও স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে তবে তার চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। এছাড়া প্রেগন্যান্সিতে স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েট মা এর শরীর ঠিক রাখার জন্য ও শিশুর বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার, তাই এই ব্যাপারে খেয়াল রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।