আপনি কি জানেন যেসব বাচ্চা অনেক লোকের মাঝে বেড়ে ওঠে বা যাদের পরিবারে সবাই কথা বলতে ভালোবাসে সেই বাচ্চা তিন বছর বয়স হলে তার আইকিউ ভালো হয় ? তুলনামূলকভাবে শান্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুর তুলনায় এই জাতীয় শিশুরা নয় বছর বয়সে স্কুলের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়। এই বিষয়টি প্রকাশিত হয় বেটি হার্ট এবং টড রিসলে রচিত ‘Meaningful Differences in the Everyday Experience of Young American Children’ নামক একটি বইতে।
সাধারণত, একটি শিশুর বলা প্রথম শব্দ তার মায়ের খুব ভাল করে মনে থাকে। তবে,জানেন কি বাচ্চার কথা বলা শেখার সঠিক বয়স কী ? আপনি কি জানেন যে এমন কিছু শিশু আছে যারা আট মাস বয়সের মধ্যে তিনটি শব্দযুক্ত বাক্য বলতে পারে?
আমরা আপনার বাচ্চাকে ভাষার দক্ষতা গড়ে তুলতে সহায়তা করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেব এই প্রবন্ধে।
১. খুব তাড়াতাড়ি কথা বলা শুরু করুন
আপনার বাচ্চা যখন এখনও বিড়বিড় করার পর্যায়ে থাকে, তখন আপনাকে তার মুখে শব্দ শোনার জন্য বসে না থেকে তার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলা শুরু করবেন। আপনার শিশুর সাথে শুরু থেকেই কথা বলা উচিত অর্থাৎ জন্ম থেকেই। এইভাবে শুধু ভাষা না আপনার বাচ্চার সাথে আপনার গভীর বন্ধন গড়ে উঠবে। প্রথম দিকে কথা বলা বাচ্চাদের একটি শব্দভাণ্ডার বিকাশ করতে সহায়তা করবে। প্রথম থেকেই কথা বলা শুরু করলে আপনার বাচ্চাকে ভাষার সাথে নিজেকে পরিচিত হতে সহায়তা করে। এবং নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার শিশু শব্দের অর্থ বুঝতে শুরু করবে সে মুখে না বলতে পারলেও। আপনার শিশু তার মস্তিষ্কে শব্দগুলি জমাতে শুরু করবে । আপনার বাচ্চা যত বেশি শব্দ শুনবে, ততই সে বুঝতে পারবে ভাষা।
২. ছোটো ও সহজ বাক্য দিয়ে শুরু করুন
ধরুন, যদি আপনার শিশু সারাদিনের পর খুব ক্লান্ত, তাই সে এখন ঘুমাবে তখন তাকে বলুন, “এটি তোমার ঘুমের সময় সোনা, ঘুমিয়ে পড়ো।” আপনি যদি আপনার শিশুটিকে কোনও নির্দিষ্ট জিনিসটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেন, তবে সেই জিনিসটি কী তা এবং এটি কী জন্য ব্যবহার করি আমরা তা তাকে বলুন। সেটা কোনও খাবার , পাখি বা পোষা প্রাণীর মতো প্রাণবন্ত প্রাণী হলেও তাকে বলবেন । আপনি তার জন্য যা কিছু করেন তার সম্পর্কে তাকে বলুন , খাবার তৈরি থেকে শুরু করে তার খেলনাগুলি সাজানোর ক্ষেত্রে। ছন্দযুক্ত কবিতা শোনান ওকে, দেখবেন ও আনন্দিত হয়ে উঠবে। এইভাবেই ভাষার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠবে আপনার ছোট্টটির।
৩. গল্প পড়ুন
এখনও আপনার শিশু কোনও গল্প এখনও বুঝতে পারে না তবে এটি তাকে শব্দ শেখানোর জন্য উপযুক্ত উপায়। আপনি যদি বাচ্চাদের বই পড়েন তবে সেগুলিতে সুন্দর সুন্দর ছবি থাকার সম্ভাবনা বেশি। আপনার শিশুকে সেই গল্পটি ছবির মাধ্যমে কল্পনার করার জন্য ছবিগুলি দেখান।ও তার পাশাপাশি ছবিগুলি সম্পর্কে বলুন পুচকুকে । ছয় মাসের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য ‘টাচ অ্যান্ড ফিল ’ বই পাওয়া যায় যা বেশ কার্যকর হতে পারে এ ব্যাপারে
৪. শিশুর ইঙ্গিতের উত্তর দিন
আপনার শিশু যদি কোনও বিষয়ে কিছু ইঙ্গিত করে বা কিছু বলার চেষ্টা করে নানা আওয়াজের মাধ্যমে তবে তার প্রতিক্রিয়া দিন। তাতে আপনার বাচ্চা অনুভব করবে যে সে যা বলছে আপনি তার প্রতি আগ্রহী । এটি তার জন্য যথেষ্ট উৎসাহজনক । এছাড়াও, সে যদি একটি বিড়াল বা কুকুরের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, তবে তাকে বলুন এটি কী এবং এটি কী করছে। যদি সে কোনো অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করেন এবং আপনি বুঝিয়ে পারছেন না সে কী বলতে চাইছে তবে আপনি ইতিবাচক গল্প বলতে শুরু করতে পারেন , এইভাবে আপনি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আপনার সন্তানকে কথা বলানোর জন্য উৎসাহিত করতে পারেন ।
৫. আপনার বাচ্চাকে টিভি এবং ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখুন
টিভিতে প্রচুর পরিমাণে শিশু কেন্দ্রিক প্রোগ্রাম রয়েছে। ইউটিউবে বা ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখুন বাচ্চাদের । আর তা না করলে আপনার শিশু আপনার ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনের প্রতি গভীর আসক্তি তৈরী হবে । মনে রাখবেন, আপনি হয়তো আপনার ছোট্টটিকে চুপ করে বসিয়ে রাখার জন্য তাকে হাতে ফোন দিচ্ছেন বা টিভি চালিয়ে দিচ্ছেন, কিন্তু আদতে এতে তার খারাপ হচ্ছে । তার ধীরে ধীরে ফোন বা টিভির প্রতি গভীর আসক্তি তৈরী হবে। আর অ্যানিমেশন কিন্তু আপনার শিশুর সাথে কথা বলতে পারে না। কার্টুনের একটি চরিত্রও কিন্তু আপনার শিশুর ইঙ্গিতের প্রতিক্রিয়া দেয় না। তাই কথা বলা বা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে উভয় তরফের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করা জরুরি এবং শিশুকে দ্রুত কথা বলা শেখানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার শিশু কখন কথা বলা শুরু করেছিল? আপনার ওকে কথা বলা শেখানোর অভিজ্ঞতা কী ? আমাদের জানান।