এই পৃথিবীতে বাচ্চা আসার আগেই একজন মা এবং একটি শিশুর মধ্যে এক দৃঢ় বন্ধন গড়ে ওঠে । এটির কারণ মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর কিছু পছন্দ এবং অপছন্দের বিকাশ ঘটে । এই ব্যাপারটি শুধু একজন মা ছাড়া আর কেউই প্রায় টের পায় না। কখনও কখনও, এটি কেবল একটি ইঙ্গিতের চেয়ে বেশি হয়। এইসব বিষয় বাচ্চা এবং মায়ের মধ্যে একটি গোপন ভাষা হয়ে ওঠে, যা কেবল দুজনেই বুঝতে পারে। এবং, অবশ্যই, নয় মাস এই বোঝাপড়া বাড়তে থাকে ।
গর্ভে থাকাকালীন বাচ্চা সবচেয়ে বেশি কী কী পছন্দ করতে পারে, তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল।
১. মিষ্টি জিনিস খাওয়া
ধরুন আপনার মিষ্টি জাতীয় খাবারের জন্য সকাল থেকে মনটা আনচান করছে , আর এটা আপনার গর্ভাবস্থায় হয়েই থাকে । আপনি যখনই স্পঞ্জি কেকে কামড় বসালেন বা আইসক্রিমের প্রথম চামচটি মুখে দিলেন , আপনি আপনার শিশুর নড়াচড়া লক্ষ্য করলেন । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চারা গর্ভের ভেতরেও আপনার খাওয়া খাবারগুলির স্বাদ নিতে পারে ! তারা এই স্বাদ পায় অ্যামনিয়োটিক তরল থেকে (1)। গর্ভস্থ শিশুরা মশলাদার খাবারের তুলনায় মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করে। সুতরাং, পরের বার আপনার যদি মিষ্টি মিষ্টি কিছু খেতে ইচ্ছে করে , ক্যালোরির কথা ভুলে আপনি এবং আপনার শিশুর এর স্বাদ উপভোগ করুন। তবে আবার অতিরিক্ত মাত্রায় খাবেন না যেন, এতে বদহজমের সমস্যা হতে পারে।
২. স্নান
মাঝে মাঝে গর্ভাবস্থা ক্লান্তিময় হয়ে ওঠে, বিশেষত শেষ ত্রৈমাসিকের সময়। তাই শরীরকে রিলাক্স করার এক উপায় হল স্নান । তবে, ঠান্ডা জলে না জল হালকা গরম করে নিয়ে তা মিশিয়ে নিয়ে স্নান করুন। এতে আপনি ও আপনার গর্ভস্থ শিশু উভয়ই আরাম পাবেন। তবে জলের আদর্শ তাপমাত্রা কী হওয়া উচিত এই নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
৩. পেটে হালকা স্পর্শ
আপনি লক্ষ্য করেছেন কি যে প্রতিবার আপনি আপনার পেটটা যখন আলতোভাবে হাত দেন আপনার বাচ্চা একটি লাথি মেড়ে সাড়া দিয়েছে? বেশ প্রায়শই, তাই না? গর্ভের শিশুরা বাহ্যিক উদ্দীপনায় সাড়া দেয়, বিশেষত যখন এটি মায়ের কাছ থেকে আসে। তারা এই ব্যাপারটিকে পছন্দ করে যার কারণে আপনি এবং আপনার সঙ্গীর দুজনের কোমল স্পর্শের সাহায্যে তার নড়াচড়া বুঝতেই পারেন (2)।
৪. মায়ের গলার আওয়াজ
সাধারণত, ১৮তম সপ্তাহের মধ্যে, শিশুর কানের গঠন শুরু হয় । শিশুর শ্রবণশক্তি বিকশিত হতে থাকে । এবং গর্ভস্থ শিশুটি প্রথম যে কণ্ঠস্বরকে চিনতে শুরু করে তার মধ্যে একটি হল মায়ের গলার আওয়াজ । ডেলিভারির দিনটি কাছে আসার সাথে সাথে আপনি দেখতে পাবেন যে আপনার বাচ্চা ক্রমশ আপনার কন্ঠে সাড়া দিচ্ছে। কারণ এটি একটি এমন আওয়াজ যা আপনার শিশু শুনতে পছন্দ করে (3)।
৫. গান
যখন আপনার শিশুর শ্রবণ ক্ষমতার কথা আসে তখন আমরা কীভাবে গানকে ভুলতে পারি? যদিও বাচ্চারা গর্ভের অভ্যন্তরে অনেক বেশি জোরে শব্দই শুনতে পারে তবে তারা কর্কশ এবং আনন্দদায়ক আওয়াজের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে! অনেক সময় তারা নির্দিষ্ট ধরণের গানের প্রতি নিজের পছন্দ প্রকাশ করে। কর্কশ আওয়াজে গর্ভস্থ শিশু অস্বস্তি বোধ করতে পারে । তাই আনন্দদায়ক গান শুনুন এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর সাথে উপভোগ করুন। তবে খুব জোরে কখনোই গান শুনবেন না, এটি আপনার মধ্যে যে নতুন প্রাণ বেড়ে উঠছে তার জন্য ক্ষতিকারক।
৬. মায়ের হাসি
হাসি সেরা ওষুধ বলা হয়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে একটি হবু সুখী মা একটি সুখী বাচ্চার জন দিতে সক্ষম । বাচ্চারা কীভাবে তাদের মায়ের স্পর্শ বা কন্ঠে সাড়া দেয় ঠিক তেমনি তারা তাদের মায়ের হাসিতেও সাড়া দেয়। আমরা যখন হাসি তখন কিছু হরমোন নিসৃত হয় (4)। এই হরমোনগুলি কেবল মাকেই নয়, একটি গর্ভস্থ শিশুকেও আনন্দ দেয় ।
ডেলিভারির যন্ত্রণার কথা না ভেবে আপনি আপাতত আপনার গর্ভের শিশুর সাথে এই মূল্যবান ছোট্ট মুহূর্তগুলি উপভোগ করুন।