প্রথমবার সন্তানকে স্পর্শ করার মুহূর্তটি প্রত্যেক মায়ের কাছেই স্মরণীয় হয়ে থাকে । যে মুহূর্তে নার্স আপনার নবজাতককে আপনার কোলে দেবে প্রথমবার , আপনার হাত অবশ্যই কেঁপে উঠবে। তবে আপনি ভয় পেলেও তাকে কাছে পেতে চাইবেন। কারণ এই সময়ের জন্যই তো আপনার দীর্ঘ অপেক্ষা !
এর কিছুদিন পর আপনি বাড়ি যাবেন, তখন আপনাকেই আপনার পুচকুকে সামলাতে হবে। অবশ্যই আপনার স্বামী, বাড়ির বড়োরা থাকবে, তাও আপনি মা, আপনারই দায়িত্ব বেশি। তাই তাকে সঠিকভাবে কোলে করার পদ্ধতি আপনাকে রপ্ত করতে হবে। তবে এটি সহজ নয়, কারণ আপনার সদ্য সি সেকশন বা নরমাল ডেলিভারি হয়েছে তাই শরীরও দুর্বল। তাই নার্ভাস বোধ করা স্বাভাবিক এবং এই সময় আশঙ্কা থাকে যে ছোট্টটি আপনার হাত থেকে পিছলে যেতে পারে। তাই আমরা আজ জানাবো এর উপায় এবং আপনার শিশুকে কোলে নেওয়ার কোন পদ্ধতি নিরাপদ এবং আরামদায়ক।
প্রথমে জেনেনি , বাচ্চাকে কোলে নেওয়ার আগে কী কী মানতে হবে ?
১. পরিষ্কার হাত – বাচ্চা কোলে নেওয়ার আগে আপনার হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে, তাই তাদের কোলে নেওয়ার সময় হাতের পরিছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে। হাত ধুয়ে ফেলতে হালকা সাবান এবং গরম জল ব্যবহার করুন। এছাড়াও, একটি স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. নিজেকে সড়গড় করুন – আপনি প্রথমে ভয় পেয়ে যেতে পারেন তবে সময়ের সাথে আপনি সড়গড় হয়ে উঠবেন, তবে পরপথমে আপনাকে মনে সাহস এনে পুচকেকে কোলে নিতে হবে।
৩. সঠিক পদ্ধতি জানুন – নবজাতকের ঘাড়ের মাংসপেশী নিয়ন্ত্রণ খুব কম থাকে। অতএব, আপনাকে তার মাথা এবং ঘাড় ভালোভাবে ধরতে হবে । তবে মাথায় বেশি চাপ দেবেন না। বাচ্চার তিন পর্যন্ত মাথা এবং ঘাড়ের পেশীগুলি নরমই থাকে, তাই একইভাবে বাচ্চাকে কোলে নিতে হবে।
কিভাবে বাচ্চাকে কোলে তুলবেন ?
কোলে রাখার জন্য আপনাকে প্রথমে বাচ্চাকে প্রথমে বিছানা থেকে হাতে নিতে হবে। এই সময় সচেতন হওয়া খুব প্রয়োজন। নিজের বুকের উচ্চতা অবধি আনুন ও পুচকের ঘাড় ও মাথায় সাপোর্ট দিন।
একটি সদ্যজাত শিশুকে কোলে রাখার বিভিন্ন পদ্ধতি
১. কাঁধে রাখুন
আপনার দেহের সমান্তরালে শিশুকে রেখে আপনার কাঁধের উচ্চতায় তুলুন। তার মাথাটি আপনার কাঁধে রাখুন যাতে সে পিছনে তাকাতে পারে।এক হাত দিয়ে তার মাথা এবং ঘাড় এবং অন্য হাত বাচ্চার নীচের দিকে তাকাতে পারে। এইভাবে কোলে নিলে বাচ্চা আপনার হৃদস্পন্দন শুনতে পাবে।
২. বুকের কাছে রাখা
এটি বেশ সহজ এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি। আপনি এইভাবে আপনার নবজাতককে ঘুম পারাতে পারেন। আপনার শিশুকে আপনার বুকের সমান্তরালে রেখে মাথা এবং ঘাড়কে পিছন থেকে ধরুন। ধীরে ধীরে আপনার কনুইয়ের ওপর আপনার শিশুর মাথা রাখুন। এবার আপনার হাতটি ঘাড় থেকে নীচে এবং নিতম্বের দিকে নিয়ে যান। এবং অন্য হাতে তার নিচের অংশকে ধরুন।
এবার বাচ্চাকে আপনার কাছাকাছি এনে দিন , দেখবেন এতে বাচ্চা তাড়াতড়ি ঘুমিয়ে পড়বে।
৩. বাচ্চার পেটকে সাপোর্ট দেওয়া
আপনার শিশু অবশ্যই এই পদ্ধতিকে উপভোগ করবে। কনুইয়ের উপরে মাথা রেখে উপুড় করে শোয়াতে পারেন হাতের ওপর, তবে খুব সাবধানে । সন্তানের সুরক্ষিত বোধ করতে আপনার অন্য হাতটি শিশুর পিঠে দিন। বাচ্চাকে ঢেকুর তোলানোর জন্য এটি উপযুক্ত।
৪. বাচ্চাকে পিছন থেকে কোলে নিন
জন্মের তিনমাস পর থেকে বাচ্চার মাথা এবং ঘাড় শক্ত হতে শুরু করে এবং এই সময় বাচ্চার পিছন থেকে ধরে তাকে কোমড়ের কাছে রাখতে পারেন । আপনার শিশুর বাইরের দিকে মুখ করে তাকে আপনার নিতম্বের হাড়ের উপরে বসিয়ে দিন। আপনার কোমরের চারপাশে আপনার হাতটি জড়িয়ে রাখুন। এতে আপনার শিশু তার চারপাশের জিনিসগুলি আরামে দেখতে সক্ষম হবে।
৫. মুখের সামনাসামনি রেখে
এই ধরণের কোলে নেওয়ার পদ্ধতি আপনাকে শিশুর সাথে যোগাযোগ করতে দেবে।
আপনার এক হাতে বাচ্চার মাথা এবং ঘাড় ধরুন। এবং আরেক হাত বাচ্চার নীচের অংশে পিছনের দিক থেকে রাখুন। আপনার মুখোমুখি বুকের নীচে শিশুটিকে ধরে রাখুন। এইভাবেই
তার হাসি উপভোগ করুন এবং তার সাথে কথা বলুন ।
৬. চেয়ারের মতো করে ধরুন
আপনার বাচ্চা কি কৌতুহলী বাচ্চা? তাই তাকে চারপাশে কী ঘটছে তা দেখানোর জন্য এই ধরণের কোলে নেওয়া উপযুক্ত। এই পদ্ধতিতে আপনার হাতের ওপর সে বসে থাকবে আর যেন মনে হবে সে চেয়ারে বসে আছে। তার বুকের একপাশে এক হাত রাখুন যাতে সে পাশের দিকে ঝুঁকতে না পারে। আপনার অন্য হাত তার নীচে রাখুন, যাতে সে ভর দিতে পারে। বাচ্চার মুখ যেন সামনের দিকে থাকে। তিন মাসের কম বাচ্চাদের কিন্তু এই পদ্ধতিতে কোলে নেবেন না।
৭. পায়ের ওপর রাখুন
বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় আপনি এইভাবে ধরতে পারেন। বসে থাকার সময় আপনার পা স্থিরভাবে জোড়া করে রাখুন এবং আপনার শিশুকে নিয়ে শিশুর মাথা আপনার হাঁটুর কাছে রেখে মুখ উপরের দিকে রাখুন। ভালোভাবে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আপনার হাতদুটিকে মাথার নীচে রাখুন এবং হাতের কব্জির সাহায্যে তাকে ধরে রাখুন ।
শিশুকে সঠিকভাবে ধরে রাখা আপনাকে তার সাথে এক নিবিড় বন্ধনে জুড়তে সাহায্য করবে। এটি আপনাকে এমন আনন্দ দেবে যা শব্দে ব্যাখ্যা করা যায় না। তবে এই আনন্দ উপভোগ করতে আপনার বাচ্চাকে কোলে করার কৌশলগুলি জানতে হবে। আশা করি, আমাদের এই প্রবন্ধ আপনাকে সেই কৌশলগুলির সম্পর্কে জানতে সহায়তা করেছে। এই অবস্থানগুলির প্রতিটির ব্যবহার করে দেখুন এবং কোনটি আপনার এবং আপনার শিশুর পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত বেছে নিন ।